=== জণ্ডিস রোগের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ==
সংজ্ঞা ( Definition ) -ইহার অপর নাম কামলা, ন্যাবা । যকৃতের পিত্ত নিঃসরণ ক্রিয়ার স্বল্পতা অথবা অবরুদ্ধতাবশতঃ রক্তসহ পিত্ত মিশ্রিত হয়ে শারীরিক রক্ত মধ্যে সঞ্চালিত হয়ে শরীরস্থ চর্ম, চোখের শ্বেত বর্ণ স্থান, মুত্র পীত বর্ণ হলে তাকে জণ্ডিস বলে । জণ্ডিস নিজে কোন রোগ নয়, যকৃতের নানা প্রকার রোগের
উপসর্গ মাত্র । লিভারস্থিত পিত্তস্থলী ( Gall bladder ) হতে নিঃসৃত পিত্ত কোন কারণে যথারীতি বের হয়ে অন্ত্রে প্রবেশ করতে না পেরে যখন রক্তে মিশ্রিত হয় তখন চোখ মুখ হাত পা সর্ব শরীর হরিদ্রা বর্ণের হয় । Dr Davidson বলেনঃ- “ Jaundice is a referring yellow appearance of the skin and mucus membrane resulting from an increase bilirubin concentration in the body fluids ” .
কারণ ( Aetiology )-
➽ রক্তের লোহিত কণিকাগুলি ( RBC ) ধ্বংস অর্থাৎ হ্যামোলাইসিস হেতু ।
➽ হেপাটাইটিস, Viral Hepatitis হলে Hepato Cellular জণ্ডিস হতে পারে ।
➽ লিভারের উপর থেকে অন্ত্রের মধ্যে প্রবাহিত হবার যে পিত্ত পথ বা Bile duct থাকে সেই Bile duct এর কোন অংশে বা কোন স্থানে অবরোধ হলে ।
➽ ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর, সর্পদংশন ইত্যাদি কারণে হেমোলাইটিক জণ্ডিস হতে পারে ।
➽ গলস্টোন বা পিত্তকোষে পাথর জমলে তার ফলে পিত্ত নিঃসরণ বাঁধা পায় এবং জণ্ডিস হতে পারে ।
➽ রক্তদোষ জনিত কারণে Haemolytic জণ্ডিস হতে পারে ।
➽ বিষাক্ত ও সংক্রামক জীবাণু ঘটিত কারণে হতে পারে ।
জটিল উপসর্গ ( Complications )-
➽ লিভারে ফোঁড়া হতে পারে ।
➽ জণ্ডিস থেকে লিভার সিরোসিস হতে পারে ।
➽ দীর্ঘদিন জণ্ডিসে ভুগলে Liver Cancer হতে পারে ।
রোগ নির্ণয় ( Diagnosis )-
➽ মুখে তিক্ত আস্বাদ অনুভব ।
➽ পেটের ডানদিকে বা বামদিকে বেদনার অনুভব হতে পারে ।
➽ চোখের সাদা অংশ হলুদাভ, বমি, পিত্তবমি এবং জ্বর ভাব ।
➽ গায়ের ঘাম হলুদ বর্ণ, জামা কাপড় বিছানায় এই ঘাম লাগলে তাও হলুদ দেখায় ।
➽ ক্ষুধা হীনতা, খাদ্যে অরুচি, কাদা বর্ণের মল, কালো বা সাদা বর্ণের মল ।
➽ প্রস্রাব হলুদ, সরষের তেলের মত ।
➽ রক্তহীনতার ভাব, প্রস্রাবে প্রচুর পরিমাণে ইউরো বিলীন থাকে ।
আধুনিক পরীক্ষা ( Modern Scientific Pathological Investigation )
➽ Urine Test .
➽ Liver function test .
➽ Liver Biopsy .
➽ TC. DC. Hb% .
➽ RBS Sicklong Test .
➽ Blood Culture .
➽ Haemogram .
➽ Stool ( RE )
➽ Urine ( RE ) .
➽ Bilirubin / SGOT / SGPT / Total Protein A ; G .
লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ নির্বাচন-
➽ লিভার অঞ্চলে, ডানদিকে, ডানস্কন্ধে বেদনা । জিহ্বা পরিষ্কার, গাঢ় লালবর্ণ বা তিক্ত স্বাদ । হরিদ্রা বর্ণের মল, সাদা মল ,চোখ মুখ হরিদ্রা বর্ণ এবং শরীরও হরিদ্রাবর্ণ । চেলিডোনিয়াম Q ৪/৫ ফোঁটা মাত্রায় জলের সঙ্গে দিনে তিন বার সেব্য ।
➽লিভার স্ফীত ও প্রদাহ । সূচীভেদ্য বেদনা । জ্বর । অত্যন্ত পিপাসা, পিত্ত বমি, কোষ্ঠকাঠিন্য । জিহ্বা ময়লার প্রলেপ, হলদে বর্ণের লেপ । নড়াচড়া যন্ত্রণাবৃদ্ধি । উত্তাপে ও চাপে উপশম । ব্রায়োনিয়া 6/30 দিনে ৩ বার সেব্য ।
➽যকৃত শক্ত, বৃদ্ধি । কোষ্ঠকাঠিন্য । প্রচণ্ড ব্যথা, লিভার অঞ্চলে বেদনা । উত্তেজক দ্রব্যাদি পানাহারে রোগ সৃষ্টি । মুখে অরুচি, মুখে তিক্ত স্বাদ । অম্লস্বাদ । নাক্স-ভমিকা 1x দিনে ২ বার সেব্য ।
➽ পিত্ত বমি, পিত্ত বদ্ধ হয়ে রোগ সৃষ্টি । যকৃতে টাটানি ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য বা উদরাময় । সর্বদাই গা বমি বমি ভাব । পেটের উপর চাপ দিয়ে শুয়ে আরাম । দীর্ঘ দিনের অজীর্ণতা । পডোফাইলাম 3/6 দিনে ৩ বার সেব্য ।
➽ লিভার স্থানে অত্যন্ত বেদনা । সর্বদাই মলবেগ । তৎসহ পাকাশয়িক গোলযোগ । গুহ্যদবারে বেদনা । বুকজ্বালা, ভুক্ত দ্রব্যবমন । কাদার মত মল । বার্বেরিস Q , ৩/৪ ফোঁটা মাত্রায় জলে গুলিয়া দিনে ৩ বার সেব্য ।
➽ টাইফয়েড বা কোন উৎকট ব্যাধির উপসর্গ । পারদ ব্যবহারের কুফল । জ্বরের পর জণ্ডিস রোগ, অজীর্ণতা । আর্সেনিক 6/30 দিনে ২ বার সেব্য ।
➽ম্যালেরিয়া জনিত জণ্ডিস । মুখমণ্ডল মলিন । পিত্তযুক্ত তরল মল, পিত্ত পাথুরি । লিভারে সুচ ফুটানো বেদনা । মুখে তিক্ত স্বাদ । অতিশয় দুর্বলতা । চায়না 3x দিনে ৩ বার সেব্য ।
➽গর্ভাবস্থায় জণ্ডিসে উপকারী । চোখ, মুখ, সর্ব শরীর হলুদ । প্রচুর ধুসর বর্ণের মল, কালচে মুত্র ।স্বর ভঙ্গ, কাশি, হতাশার ভাব । ফসফরাস 3x দিনে ৩ বার সেব্য ।
➽লিভারে রক্ত জমা । নাক দিয়ে রক্ত পড়ে । জিহ্বায় ময়লার প্রলেপ । জিহ্বা ফাটা । মুখের স্বাদ তিক্ত । কোষ্ঠকাঠিন্য, বমি বমি ভাব । মল শক্ত, গাঁট গাঁট । কার্ডুয়াস Q, ২/৩ ফোঁটা মাত্রা জলে গুলিয়া দিনে ।
➽ কোষ্ঠকাঠিন্য । ফ্যাঁকাসে বা হলদে বর্ণের মুত্র । বিছানায় হলুদ বর্ণের দাগ লাগা । নাড়ী ক্ষীণ, কোমল সর্বাঙ্গে হলুদ বর্ণ । লিভারের পুরাতন রোগ, লিভার প্রদাহ । ভোরের দিকে অধিক দুর্বলতা । চর্মরোগ সহ লিভার দোষ । নরম মল, কালো মল, দুপুরে খাবার পরই পায়খানা । মার্কভাই 6/30 দিনে তিন বার সেব্য ।
➽ সিরোসিস লিভার জনিত জণ্ডিস । পারদের অপব্যবহার হেতু । প্লীহার রোগ । খায়দায় ভাল কিন্তু শীর্ণ চেহারা । খাবার পর বমি । উদরাময় ও কোষ্ঠকাঠিন্য পর্যায়ক্রমে । আয়োডাম 6/30 দিনে তিন বার সেব্য
➽লিভার বেদনা । জ্বর । ছাইয়ের মত বা কাদার মত মল । ক্ষুধাহীনতা, খাদ্যে অরুচি । সমস্ত শরীর হলুদ বর্ণ, গা বমি বমি । জিহ্বা অপরিষ্কার । উদরাময় । চায়নার সঙ্গে পর্যায়ক্রমে ব্যবহার । মার্কসল 6/30 দিনে দুই বার সেব্য।
➽ পিত্তের দোষ, টক বমি, তিক্ত টক মিশ্রিত বমি । অধিক মাত্রায় পিত্ত নিঃসরণ । মাথার সম্মুখ ভাগে বেদনা । বমি ভাব । সমস্ত অন্ত্রে জ্বালা পোড়া ভাব । রক্তাক্ত, টক ও পিত্ত বমি, ক্ষুধাহীনতা । আইরিস ভার্স Q, ২/৩ ফোঁটা মাত্রায় জলে গুলিয়া প্রত্যহ তিন বার সেব্য।
➽ জণ্ডিসের পূর্ণ লক্ষণ, নিদ্রাহীনতা । স্কন্ধ অস্থি দুটিতে বেদনা, বায়ু নিঃসরণ । পেশী বেদনা । ভয়ংকর নিদ্রাহীনতা । হাঁটাচলার সময় বায়ু নিঃসরণ । মলের বেগ, কিন্তু বায়ু ছাড়া কিছুই নিঃসরণ হয় না । মাইরিকা Q , ২/৩ ফোঁটা মাত্রায় জলে গুলিয়া প্রত্যহ তিন বার সেব্য ।
➽লিভারে বেদনা, উদরাময়, কাদার মত মল । ম্যালেরিয়া দোষ । মাথায় যন্ত্রণা, ঘুম ঘুম ভাব । চোখে জ্বালা পোড়া । জিভে হলুদ ময়লা । কালো দুর্গন্ধযুক্ত মল । পিত্ত মিশ্রিত মুত্র, কালোবর্ণ । টাইফয়েডর মল কালো আলকাতরার মত এবং জণ্ডিসের মল কাদার মত । গুহ্যদ্বার বেড়িয়ে যায় । ল্যাপটেন্ডরা Q , ২/৩ ফোঁটা মাত্রায় জলে গুলিয়া প্রত্যহ তিন বার সেব্য ।
➽লিভারের ক্রিয়া খারাপ, অত্যন্ত বেদনা । গ্যাসস্ট্রিকের দোষ, গলস্টোন ।ডান অণ্ডকোষে টেনে ধরার ন্যায় বেদনা । মেরুদণ্ড অঞ্চলে ( Lumbar region ) ভয়ানক ব্যথা বসা থেকে উঠতে গেলে হাতে ভর দিয়ে উঠতে হয় । হাইড্রাসটিস 30 , দিনে দুই বার সেব্য।
পথ্য এবং আনুসাঙ্গিক ব্যবস্থা -
পেটে ভয়ংকর বেদনা হলে গরম সেঁক উপকারী । লিভার স্থান এবং পেটের বাম দিকে । পেঁপের রস, কালোমেঘের পাতার রস খেলে উপকার । কমলা লেবু, বাতাবী লেবুর রস, আনারসের রস উপকারী । পুরাতন যব, গম, চাল, মসুরের ডালের জুস উপকারী । পাকা কুমড়া, কাঁচা কলা, হিঞ্চে, তরিতরকারি, সিঙ্গি মাছ, ঘোল, মাখন খাওয়া যায় । যথেষ্ট পরিমাণ গ্লুকোজের জল পান করা উপকার । উগ্রমশলা যুক্ত খাদ্য, ঘি, তেল, মাছ, মাংস খাওয়া নিষেধ । জ্বর অবস্থায় সাবু, বার্লি, এরারুট দেয়া যায় যদি হজম হয় তবে উহার সঙ্গে সামান্য পরিমাণ দুধ দিয়ে মিছরি ফেলে দেয়া ভাল । কোন ভাজা, তেলে ভাজা, ঝাল, টক, বাসি একদম নিষেধ । থানকুনি পাতার রস উপকারী । মাঝে মাঝে বেলপোড়া খেলে পায়খানা পরিষ্কার হয় । রোগীকে পূর্ণ বিশ্রামে রাখা এবং সাধারণ স্বাস্থ্য রক্ষা নিয়ম পালন করতে হবে।
সতর্কতা-
অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এই লক্ষণের উপর ঔষধ সেবন করা যাবে না ।